বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসক নেই ওয়ার্ড বয়ের কাজ করে সুইপার

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাও) থেকে মোঃ বিপ্লব::

তখন রাত ১২টা একজন অসুস্থ রোগীকে তার আত্বীয়-স্বজনরা চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন রাণীশংকৈল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী চিকিৎসা বিভাগে। এসময় জরুরী চিকিৎসা বিভাগের দরজা বন্ধ থাকায় তা নক করতেই খুললেন একজন ব্যক্তি। তিনি নাকি ওয়ার্ড বয় আর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার নাকি বাসায়। তড়িঘড়ি করে ডেকে আনতে সে যাত্রায় রোগী প্রায় শেষ পর্যায়ে। মিনিট বিশেক পড়ে আসলেন চিকিৎসক এসে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা দিতে দিতেই মারা যান সে রোগী।

সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটে ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর রোগীর বাড়ী পৌরশহরের ভান্ডারা গ্রামে। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকবর আলী। রোগীর স্বজনরা আফসোস করে বলে আসার সাথেই যদি চিকিৎসা শুরু হতো, বিশেষ করে অক্সিজেন দেওয়া হতো তাহলে হয়তো রোগীটি বেঁচে যেতো।

পড়ে জানা যায়, ওয়ার্ড বয় সেজে থাকা ব্যক্তির পরিচয়। তিনি হচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুইপার দিলীপ। এভাবেই চিকিৎসকের অভাবে অনেক গরীব দু:খী বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। কেউ কেউ আবার মারাও যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার নেই। এক্সরে মেশিন বিকল পাঁচ বছর যাবৎ। বিদ্যুৎ না থাকলে বৈদ্যুতিক জেনারেটর চলে না, নেই কোন নিয়ম শৃঙ্খলা। কর্মচারীরও চলে ইচ্ছেমত। গুরুত্বপূর্ণ পদের বেশিরভাগ কর্মচারীরা রয়েছেন প্রেষণে অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

জরুরী বিভাগের ওয়ার্ড বয়ের পদ ২টি হলেও রয়েছে বাবুল নামে একজন, আয়া ২টি পদ থাকলেও রয়েছে একজন, আফসানা মিমি জুনিয়র মেকানিক্যাল, সোহরাদী ইমার্জেন্সী এটেনডেন্স, সাইদুর রহমান ওটি, আইয়ুব আলী মালি, জিয়াউর রহমান নাইট গার্ড হিসেবে ৩টি পদের দায়িত্বে রয়েছেন ১জন, সুইপার পদ ৫টি রয়েছেন ৪জন কর্মরত, এর মধ্যে রমানন্দ সহ উল্লেখিতরা প্রেষণে রয়েছেন ঠাকুরগাও সদর হাসপাতালে। এদের মধ্যে সুইপার দিলীপ করছেন ওয়ার্ড বয়ের কাজ। এছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারী পদের সংখ্যা ৩০ হলেও কর্মরত রয়েছে ২৪জন।

উপজেলা স্ব্যস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিক উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ৩০টি, তার মধ্যে ৭টি পদে উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা, আরএমও, ডেন্টাল সার্জন, এ্যানেসথেসিষ্ট, মেডিক্যাল অফিসার সহকারী সার্জন চিকিৎসক কাগজে কলমে থাকলেও প্রেষণে রয়েছেন ২জন চিকিৎসক। এরা হলেন, মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার ঠাকুরগাও সদর হাসপাতালে। এ্যানেসথেসিষ্ট ডাঃ উজ্জল কুমার ঘোষ রয়েছেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

সহ-সার্জন ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০১২ সাল থেকে এবং ডাঃ খন্দকার নাদিয়া আফরিন ২০১১ সাল থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অন্যদিকে জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথিয়া), চক্ষু/শিশু/জুনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনী/কার্ডিও/চর্ম ও যৌন, সার্জারী/অর্থোপেডিক্স, মেডিসিন/ইএনটি সহ গুরুত্বপূর্ণ পদের চিকিৎসকের পদ থাকলেও এসব পদে কখনো এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শামীম আহম্মেদ বলেন, নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ হবে কি না তা আমার জানা নেই। তবে নিয়োগ দিলে আমি তাদের থাকার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দিবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com